অপরাধ: নাটোরের বড়াইগ্রামে স্কুলছাত্রীকে (১৫) ডেকে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রেমিকসহ তার ৬ বন্ধুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও ভুক্তভোগী পায়নি কোনো আইনি সহায়তা। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এই ঘটনাটি বিভিন্নভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালিশ ডাকলেও সেখানে প্রভাবশালী মহলের কারণে অভিযুক্তরা উপস্থিত হয়নি।
জানা যায়, ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে ধর্ষকেরা। সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ারও হুমকিও দেয় তারা। ওই ঘটনার ২৬ দিন পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, উপজেলার জোয়াড়ি আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে পারভেজ (২২), মন্টু সুপারির ছেলে সাগর (২৩), শ্রী রনজিতের ছেলে প্রসনজিত (২২), শ্রী রতনের ছেলে জিত কুমার (২১), শ্রী পরিমলের ছেলে কৃষ্ণ কুমার (২০) ও বাগাতিপাড়ার কাজিপাড়া গ্রামের মজিবরের বাসার ভাড়াটিয়া ও আনিছ আলির ছেলে মহন আলী (২৪)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের সুমন কুমার উত্তমের পেয়ারা বাগানে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। সেখানে দুই ঘণ্টাব্যাপী দলবদ্ধভাবে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। এতে মেয়েটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার বাড়ির কাছে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসে। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে স্থানীয়রা রাস্তায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখলে বাড়িতে খবর দেয় এবং পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী জানান, আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে কলেজছাত্র পারভেজের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়া শেষে বের হলে পারভেজ জানায়, ‘আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে আব্বার সঙ্গে কথা হয়েছে। আব্বা খুবই অসুস্থ, তাই তিনি তোমাকে দেখতে চেয়েছেন।’ পারভেজের এমন কথায় তার বাড়ির দিকে রওনা হয় সে। পথে পারভেজের বাড়ির কাছের রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ পারভেজসহ তার ৬ জন বন্ধু তাকে মুখ চেপে রাস্তার পাশের পেয়ারা বাগানে নিয়ে যায় এবং সেখানে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা জানান, মেয়েটিকে তারা (অভিযুক্তরা) অজ্ঞান ও রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে যায়। পরে জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি মেয়েকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার বিচার চেয়ে জোয়াড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী, দয়ারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুর ইসলাম মিঠুর কাছে গিয়েছি। কিন্তু ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী ও প্রধান আসামি পারভেজের মামা আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রভাবশালী লোকজনকে টাকা দিয়েছে। এতে তারা সময়মতো আমাদেরকে থানাতেও যেতে দেয়নি।’
এ ব্যাপারে কথা হলে বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার শফিউল আযম খাঁন জানান, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি। অন্যদিকে, আদালতে মামলা দায়ের করার পর ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নাটোর কার্যালয়কে দায়িত্ব দেয়ার ১১ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা তদন্তের জন্য আসেনি।
নাটোর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আমাদের দপ্তরে এসে পৌঁছায়নি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় সব দায়িত্ব পালন করবো।