যে কারণে আশুরায়ে মহররম পালন করা হয়

Posted by

কেটিভি নিউজ ডেস্ক: ইসলামের নামে প্রচলিত অনৈসলামি পর্ব সমূহের মধ্যে একটি হলো ১০ মুহাররম তারিখে প্রচলিত আশুরা পর্ব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবায়ে কেরামের যুগে এ পর্বের কোন অস্তিত্ব ছিল না। আল্লাহর নিকটে বছরের চারটি মাস মহা সম্মানিত। যুল-ক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররম একটানা তিন মাস এবং তার পাঁচ মাস পর ‘রজব’, যা শাবানের পূর্ববর্তী মাস’। জাহেলি যুগের আরবরা এই চার মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ করত না। দুর্ভাগ্য যে, মুসলমান হয়েও আমরা অতটুকু করতে পারি না।

যে কারণে আশুরায়ে মহররম পালন করা হয়

আশুরার গুরুত্ব ও কারণ
হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ (يَوْمُ عَاشُورَاءَ) বলা হয়। এদিন আল্লাহর হুকুমে মিসরের অত্যাচারী সম্রাট ফেরাউন সসৈন্যে নদীতে ডুবে মরেছিল এবং মূসা (আ.) ও তার সাথি বনি ইসরাইলগণ ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে মূসা (আ.) এদিন সিয়াম রাখেন’। সেকারণ এদিন নাজাতে মূসার শুকরিয়ার নিয়তে সিয়াম রাখা মুস্তাহাব। যা রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিতভাবে পালন করতেন।

ইসলাম আসার পূর্ব থেকেই ইহুদি, নাছারা ও মক্কার কুরায়েশরা এদিন সিয়াম রাখায় অভ্যস্ত ছিল। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) নিজে ও তার হুকুম মতে সকল মুসলমান এদিন সিয়াম রাখতেন (ঐ, শরহ নববী)। অতঃপর ২য় হিজরিতে রমজানের সিয়াম ফরজ হলে তিনি বলেন, ‘এখন তোমরা আশুরার সিয়াম রাখতেও পার, ছাড়তেও পার। তবে আমি সিয়াম রেখেছি’। ইহুদিদের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমাদের চাইতে আমরাই মূসার (আদর্শের) অধিক হকদার ও অধিক নিকটবর্তী’। ইবনু আববাস (রা.) বলেন, লোকেরা বলল, ইহুদি-নাছারাগণ আশুরার দিনকে খুবই সম্মান দেয়। জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ই মুহাররম সহ সিয়াম রাখব’।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আগামীতে বেঁচে থাকলে আমি অবশ্যই ৯ই মুহাররম সহ সিয়াম রাখব’। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম মাস আসার আগেই তার মৃত্যু হয়ে যায়’। ইবনু আববাস (রা.) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা আশুরার দিন সিয়াম রাখ এবং ইহুদিদের খেলাফ কর। তোমরা আশুরার সঙ্গে তার পূর্বের দিন অথবা পরের দিন সিয়াম রাখ’। আলবানি বলেন, হাদিসটি মওকুফ সহিহ (ঐ)। তবে ৯ ও ১০ দু-দিন রাখাই উত্তম। কেননা রাসূল (সা.) ৯ তারিখ সিয়াম রাখতে চেয়েছিলেন।

আশুরার সিয়ামের ফযীলত
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। অর্থাৎ আশুরার সিয়াম’। তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, আশুরার সিয়াম বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহ সমূহের কাফ্ফারা হবে’।

প্রচলিত আশুরা
প্রচলিত আশুরার প্রধান বিষয় হলো শাহাদাতে কারবালা, যা শাহাদাতে হুসায়েনের শোক দিবস হিসাবে পালিত হয়। যেখানে আছে কেবল অপচয় ও হাজার রকমের শিরকি ও বিদ‘আতী কর্মকাণ্ড। যেমন তা‘যিয়ার নামে হোসায়েনের ভুয়া কবর বানানো, তার কাছে গিয়ে প্রার্থনা করা, তার ধুলা গায়ে মাখা, তার দিকে সিজদা করা, তার সম্মানে মাথা নীচু করে দাঁড়ান, ‘হায় হোসেন’ ‘হায় হোসেন’ বলে মাতম করা, বুক চাপড়ানো, তা‘যিয়া দেওয়ার মানত করা, তা‘যিয়ার সম্মানে রাস্তায় জুতা খুলে চলা, হোসেনের নামে মোরগ উড়িয়ে দেওয়া। অতঃপর ছেলে ও মেয়েরা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ঐ ‘বরকতের মোরগ’ ধরা ও তা জবেহ করে খাওয়া। ঐ নামে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ে চেরাগ জ্বালানো, ঐ নামে কেক-পাউরুটি বানিয়ে ‘বরকতের পিঠা’ বলে ধোঁকা দেওয়া ও তা বেশী দামে বিক্রি করা এবং বরকতের আশায় তা খরিদ করা, সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল নিয়ে কারবালা যুদ্ধের মহড়া দেওয়া, শোক বা তা‘যিয়া মিছিল করা, তাবার্রুক বিতরণ করা, শোকের কারণে এ মাসে বিবাহ-শাদী না করা ইত্যাদি। এমনকি এদিন উসকানিমূলক এমন কিছু কাজ করা হয়, যে কারণে প্রতি বছর আশুরা উপলক্ষে শী‘আ-সুন্নী পরস্পরে খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ইসলামে শোক
কোনো মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে ইন্না লিল্লাহ.. পাঠ করা এবং মৃতের জানাজা করাই হলো ইসলামের বিধান। এর বাইরে অন্য কিছু নয়। স্বামী ব্যতীত অন্য মৃতের জন্য তিন দিনের ঊর্ধ্বে শোক করা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি শোকে মুখ চাপড়ায়, বুকের কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহেলি যুগের ন্যায় চিৎকার দিয়ে কাঁদে’।

তিনি বলেন, ‘আমি দায়মুক্ত ঐ ব্যক্তি থেকে, যে শোকে মাথা মুণ্ডন করে, চিৎকার দিয়ে কাঁদে ও বুকের কাপড় ছিঁড়ে’ (বুখারী হা/১২৯৬)। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যার জন্য শোক করা হবে, তাকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে’ (বুখারী হা/১২৯১)।

পবিত্র আশুরা নিয়ে সিদ্ধান্ত আসছে সন্ধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Tags